সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া মুভি মরবিয়াস সনির স্পাইডারভার্সের ৩য় মুভি। মুভিটি আসার কথা ছিল ২০২০ সালে তবে করোনা এবং বিভিন্ন রিশুটের কারনে মুভিটি ২ বছর পর রিলিজ পেলো। মুভিটি সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে রিভিউ শুনছিলাম যার মধ্যে বাজে cgi, প্রেডিক্টেবল স্টোরিলাইন, কনফিউজিং প্লট আর খুবই বাজে পোস্ট ক্রেডিট সিন ছিল রিভিউ গুলোর মূল কথা। এসব রিভিউ শুনার পর যথাযথ কারনেই হলে যেয়ে সিনেমাটি দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি কিন্তু বন্ধু দের সাথে আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিল বিধায় মুভিটি দেখতে যাই। তবে যাওয়ার সময় ভেবেই রেখেছিলাম, ১০৮ মিনিট বোর হতে যাচ্ছি, কোন আশাই রাখিনি। তবে যতোটা খারাপ আশা করেছিলাম, তার চেয়ে কমই হতাশ হয়েছি। মরবিয়াস মুভিটি একজন ট্যালেন্টেড ডক্টরের কাহিনী যিনি নিজের দূরারোগ্য রোগের ট্রিটমেন্টের জন্য ব্যাট বা বাদুড় এর DNA নিজের শরীরে ট্রান্সফার করে দেয়, যার ফলে তার শারীরিক সীমাবদ্ধতা গুলো দূর হলেও ভয়ঙ্কর সাইড ইফেক্টের স্বীকার হন, তার মধ্যে ভ্যাম্পায়ারের ক্ষমতা চলে আসে। তার কাছের বন্ধু মাইলো ও একই রোগে আক্রান্ত। কিভাবে ডক্টর মরবিয়াস তার এই ভ্যাম্পায়ার এবিলিটি নিয়ে চলবে এবং তার বন্ধু মাইলো কিভাবে সেরে উঠবে বা মাইলোর ই কি পরিনতি হবে, সেটা নিয়েই এই মুভি।
স্টোরি নিয়ে বলতে গেলে, এই মুভির স্টোরি, প্লট ২ টাই খুব প্রেডিক্টেবল ছিল। গল্পের মধ্যে নতুনত্ব বলতে কিছুই নেই। তবে আমি হলে ততটা বোরিং হইনি যতটা রিভিউ গুলোতে বলা আছে। স্টোরির কিছু প্লট কনফিউজিং ছিল, কেন ঘটেছে, কিভাবে ঘটেছে, এর কোন উত্তর আমি পাইনি। স্টোরির কথা বাদ দিয়ে যদি অন্য বিষয়ে আসি, কোন বিষয়ই তেমন ভাল ছিল না, আবার ফেলে দেয়ার মতো খারাপ ও ছিল না। সিনেমাটোগ্রাফি, ডিরেকশন এভারেজ ছিল। CGI নিয়ে বাজে রিভিউ এসেছে, তবে CGI নিয়ে আমার কোন সমস্যা হয়নি। এক্টিং এর মধ্যে, জ্যারেড লেটো, ম্যাট স্মিথ সহ প্রায় সবাই মোটামোটি লেভেলের কাজ ই করেছেন। আরেকটা বিষয় যেটা ভাল লেগেছে সেটা হলো মুভির টোন, যা যথাসম্ভব ডার্ক রাখা হয়েছে। মুভিতে ডিটেক্টিভ একটা ক্যারেক্টার কে কিছুটা কমেডি ধাচের স্ক্রিপ্ট দেয়া হয়েছে, সেটা বাদে বাকি মুভি সিরিয়াস টোনেই চলে। এতক্ষন মুভির তুলনামূলক ভাল দিক গুলা বললাম, তাই বলে এই ভেবেন না মুভিটা ভাল। এবার আশা যাক মুভির দুর্বল দিক গুলো নিয়ে। প্রথমেই যেই বিষয়টা আমার বাজে লেগেছে সেটা হলো মুভির ভিলেন। ভিলেনের মোটিভ টা কি সেটা মোটেও স্পষ্ট ছিলনা। ভিলেন কি চায় সেটা হয়তো ক্লিয়ার, বাট সে যা চায় এবং সেটার জন্য যা করে তা মোটেও ক্লিয়ার ছিল না, খুবই কনফিউজিং ছিল। দ্বিতীয়ত, মুভিটির ফাইনাল একশন, এই মুভির লাস্ট এক্ট দেখার পর আমার ভেনম ভার্সেস রায়োটের ফাইটটাকে খুবই ভাল মনে হয়েছিল। তৃতীয়ত, মুভিটার ফাইনাল এডিট। মুভি থেকে স্পাইডারম্যানের সমস্ত রেফারেন্স সরিয়ে ফেলা হয়েছে, তবে ভেনমের রেফারেন্স আছে। ১ম ২ টা ট্রেইলারে দেখে মনে হয়েছিল মুভিতে মরবিয়াসের পাইয়ার গুলো ভালোমতো এক্সপ্লোর করা দেখাবে, হয়তো ১ম কাটে মুভিতে ছিলোও, বাট ফাইনাল কাটে এসব কিছুই নেই। যদি মুভিতে মরবিয়াস কিভাবে তার ভ্যাম্পায়ার ক্ষমতা কন্ট্রোল করে বা করতে শিখছে এটা ডিটেইলসে দেখাত, তবে মুভিটা যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং হতে পারতো। এরপরে মুভিতে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট বিষয়টা আমার ভাল লাগে নি, বিশেষ করে মরবিয়াস আর মার্টিনির রিলেশন টা আমার ফোর্সড লেগেছে, যদিও মুভিটা সুপারহিরো মুভি, তাই এই বিষয়টা ইগনোর করা যায়। আর সবাই যে পোস্ট ক্রেডিট সিন কে worst, confusing বলছে সেটা বলারও কারন আছে, তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে সেটা অতো বেশি ম্যাটার করে না, পোস্ট ক্রেডিট সিনে একটা হিন্টস তারা দিয়েছে সেটা দর্শক রা পেয়েছে, তবে কেনো হিন্ট টা দেয়া হলো, কোন রাস্তায় যেয়ে হিন্ট টা ঠেকবে সেটা নিশ্চই পোস্ট ক্রেডিট সিন ক্লিয়ার করবে না, তাই এটাকেও আমি মেজর প্রবলেম মনে করিনা। এখন প্রশ্ন হলো, মুভিটার এত পটেনশিয়াল থাকার পরও মুভিটা এত বাজে কেন হল? জি মুভিটা পটেনশিয়াল ছিল, মুভিতা কিছু সিন দেখেই বুঝা যায়, মুভিটা তুলনামূলক অনেক ভাল হতে পারত। অনেকেই বলবেন সনির মুভি মানেই বাজে মুভি, যেকথা আমি মানতে নারাজ। আমার মতে (সম্পূর্ণ আমার পারসোনাল মতামত) আজ পর্যন্ত যতগুলো স্পাইডারম্যানের মুভি দেখেছি, তার মধ্যে সেরা ২ টা বানাতে MCU এর কোন অবদান ছিল না, স্পাইডারম্যান ২ আর ইন্টু দ্যা স্পাইডারভার্স। নো ওয়ে হোম মুভিটাও গ্রেট বাট রাইমিভার্স আর ওয়েবভার্স ছাড়া এই মুভিটা কতটুকু নষ্টালজিক হত তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার, তাই কৃতিত্ব কিছুটা সনিকে দিতেই হবে। স্পাইডারম্যান ৩ মুভিটা হতাশাজনক হলেও সিম্বায়োট পার্টটা বাদ দিলে মুভিটা ভালোই ছিল। এমেজিং স্পাইডারম্যান মুভিটাও ভাল ছিল। এথেকে বুঝা যায় সনি চাইলে ভাল মুভি বানাতে পারে। তবে তাদের সমস্যা টা কোথায়? সমস্যাটা হলো তাদের অতিরিক্ত প্লট এবং তাদের ড্রিম প্রজেক্ট সিনিষ্টার সিক্স মুভির জন্য তাড়াহুড়া যেটার ১ম স্বীকার দ্যা এমেজিং স্পাইডারম্যান ২। এছাড়া সনি এখন হয়তো প্ল্যান করছে- তারা কয়েকটা ভিলেন কে স্ট্যান্ড এলোন মুভি দিবে যেগুলোর বাজেট খুব কম হবে, যেসব মুভিতে লিড ক্যারেক্টার বাদে কাউকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হবে না, যার ফলে মুভিগুলো বাজে হলেও সিনিষ্টার সিক্স মেম্বার রা পরিচিতি লাভ করবে এবং পরে মাল্টিভার্স কনসেপ্ট ব্যবহার করে সবাইকে একসাথে নিয়ে স্পাইডারম্যানের এগেইনস্টে ফাইট করিয়ে দিয়ে তাদের ড্রিম প্রজেক্ট সিনিষ্টার সিক্সের স্বপ্ন পূরন করবে। ভেনমের ২ টা পার্ট নিয়ে তারা যথেষ্ট সফল ও হয়েছে তবে মরবিয়াস মুভিটা ভেনমের মতো ইম্প্যাক্ট ফেলতে পারবে না বলে মনে হচ্ছে। তাদের এই ৩ টা মুভিতেই যদি মুভির ভিলেন ক্যারেক্টার অর্থাৎ রায়োট, কার্নেজ এবং মাইলো দের আরেকটু স্ক্রিন টাইম দিয়ে তাদের পটেনশিয়াল অনুযায়ী ডেভেলপমেন্ট করে ইউজ করতে পারতো, তবে ৩ টা মুভিই আরও বেটার হতে পারতো। তাদের এন্টিহিরো মুভির লিস্টে সামনে ক্র্যাভিন মুভি আসছে। এটা আসলে দুঃখজনক যে টম হার্ডি, জ্যারেড লেটর মতো ট্যালেন্টেড এক্টরদের কাস্ট করিয়েও তাদের শাইন করার মতো যথেষ্ট সুযোগ বা স্ক্রিপ্ট তারা পাচ্ছে না।
শেষমেষ বলবো, মুভিটাকি আপনি হলে যেয়ে দেখবেন? মুভিটা সম্পর্কে আমার যে বিষয় ভাল লেগেছে তা লাগার কারন হলো একদম জিরো এক্সপেক্টেশন, আপনারও যদি এমন জিরো এক্সপেক্টেশন নিয়ে মুভি দেখার ইচ্ছা থাকে আপনি যেতে পারেন, অথবা আপনি যদি যাষ্ট মরবিয়াস ক্যারেক্টারকে বড় পর্দায় দেখার ইচ্ছা তাকে, স্টোরি প্লটের বেশু তোয়াক্কা করেন না, তবে আপনি যেতে পারেন, অন্যথায় ব্যাটম্যান আবার যেয়ে দেখে আসেন অথবা কিছুদিন পর সনিক ২ রিলিজ পাবে ওটা দেখে আইসেন। মরবিয়াস কে আমি দিবো ৪.৫/১০, যেখানে মুভির বর্তমান রোটেন টমেটো রেটিং ১৯ পার্সেন্ট। [৩য় ছবিটি মজার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে, কেউ রাগ কইরেন না]