YouTumer - ইউটিউমার Review

            ❝ইউটিউমার❞

                            - আদনান আল রাজিব 

হালকা স্পয়লার 


কিছু নির্মাতা থাকেন চোখ বুজে যাদের উপর বিশ্বাস রাখা যায়। আদনান আল রাজিব তেমনই একজন। গ্লোবাল ভিলেজের এই সময়ে প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের সমাজে, জীবনে প্রভাব ফেলেছে; বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব ❝ইউটিউমার❞ -এ তুলে ধরেছেন রাজিব। টিউমার অনিয়ন্ত্রিত কোষ৷ শরীর যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এইজন্য টিউমারকে কেটে ফেলতে হয়, ধ্বংস করে ফেলতে হয়। 
গল্পে আসা যাক, 
গ্রামের সাধাসিধা ছেলে ডন। তার একমাত্র বন্ধু মন্টি। চাকরির আশায় ঢাকায় আসে ডন, ভেতরে নায়ক হবার ইচ্ছে। কিন্তু অসংখ্য অডিশন দেয়ার পরেও তার ভাগ্যে কোন চরিত্র জোটে না। মন্টির দুলাভাই এর দয়ায় চিলড্রেন পার্কে ডামির একটা চাকরি জোটে। সেটাও চলে যায় ঘটনাচক্রে। একরাতে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটা ভিডিও আসে ডনের সামনে। মেকাপ আর্টিস্ট এক মেয়ে লাইভে কান্নাকাটি করছে সুইসাইড করবে। কয়েক লক্ষ মানুষ তার এই ভিডিও দেখে। ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু সকালে দেখা গেল উল্টা চিত্র। 
মন্টির মাথায় একটা আইডিয়া আসে। ডনকে ভাইরাল করতে হবে। তাহলে সে নায়ক হতে পারবে। ভাইরাল হওয়ার ভুত চেপে যায় তাদের মাথায়। হলোও তাই। ডন্টি নামে ইউটিউব চ্যানেল খুলে, ডনের মাথায় টিউমার আছে বলে প্রচার করে তারা। ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। এরপর মন্টি হয়ে যায় মোটিভেশান স্পিকার। রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি। মোবাইল কোম্পানি, টেলিভিশন, বার্থডে পার্টি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সব জায়গায় ডনের জয়জয়কার। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে ডনের একটা সেক্স স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়! এরপর কি হয়? 😘
জানতে হলে দেখতে হবে ❝ইউটিউমার❞।




যা কিছু ভালো লেগেছেঃ
১. ভাষায় টিউমার;
গ্লোবাল ভিলেজের আশির্বাদে স্যাটেলাইট ডিশের মাধ্যমে ঘরে ঘরে হিন্দি এবং কলকাতার সিরিয়াল/চলচ্চিত্র দেখা যাচ্ছে। এই সিরিয়াল আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এত বেশি প্রভাব ফেলেছে যে ❝দুলাভাই❞ শব্দটা বিলুপ্ত হয়ে ❝জিজুভাই❞-তে পরিণত হয়েছে। আমাদের গৌরবের, অহংকারে বাংলা ভাষার উচ্চারণ পর্যন্ত পাল্টে গেছে। নিজস্ব উচ্চারণ বাদ দিয়ে আমরা কলকাতার উচ্চারণে বাংলা বলার চেষ্টা করি নিজেকে স্মার্ট হিসেবে তুলে ধরতে। 
 ২. বেকারত্বের টিউমার;
চাকরির প্রত্যাশায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে পাড়ি জমায়। যোগ্যতা থাকা শর্তেও অনেকে চাকরি পায় না। বিভিন্ন ধরনের অন্যায়, অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। দেশের তরুণদের একটা বিশাল অংশ এইজন্য টিকটক, লাইকি, ইউটিউবে একটা অসুস্থ সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে, যেটা টিউমারের মতো দিনদিন বড় হচ্ছে।
 ৩. ব্যক্তি পূজার টিউমার;
সালমান মুক্তাদির, আইমান সাদিক, প্রত্যয় হিরন, হিরো আলম, রাফসান, তাসিনেশান, অপু; কারো কাছে এরা হিরো। পূজনীয় ব্যক্তি। আবার কারোর কাছে এরা বস্তির পোলাপান। যারা এদের প্রশংসা করে তারা নিজেরাও ক্ষ্যাত, বস্তি। এমনই ধারণা বেশিরভাগের। কিন্তু দুইপক্ষই ভুলে যায় এরা যা করছে সব আলোচনায় থাকার জন্যই করছে। যতদিন আমরা এদের নিয়ে আলোচনা করতে থাকবো ততদিন সুস্থ্য ধারার বিনোদন (টেলিভিশন, চলচ্চিত্র এবং ইউটিউব) আরও সংকুচিত হয়ে আসবে প্রচার প্রসারের অভাবে। নিজেদের মনজগতে বাড়তে থাকা এই টিউমার নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে। 
যা কিছু ভালো লাগেনিঃ 
জিয়াউল হক পলাশের অভিনয় আমার কোনোকালেই ভালো লাগেনি (ব্যক্তিগত অভিমত)। ব্যাচেলর পয়েন্টের ভাড়ামো সব জায়গায় চলে না। তবে তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। পলাশের চরিত্রে মিশু সাব্বির থাকলে ষোলকলা পূর্ণ হতো। জ্যাকসন ভাইয়ের চরিত্রটা উপরে উল্লেখ করা ৩ নং পয়েন্টের মতো। এই চরিত্র না থাকলেও তেমন কোনো প্রভাব পড়তো না। স্যাকরেড গেমস বা পাতাল লোকের গুরুজীর মতো একটা চরিত্র জ্যাকসন ভাইকে দিয়ে করাতে চেয়েছিলেন রাজিব তবে হয়ে ওঠেনি😏। 



সবশেষ যা বলার দরকারঃ🤔🤔 
ভার্চুয়ালে দেখবেন কিছু অপরিচিত লোকজন পারলে আপনার জন্য জানপ্রাণ সব দিয়ে দিবে। কিন্তু বাস্তবে প্রয়োজনে এদের আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না। সড়ক আন্দোলন, নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে আমি সরাসরি ছিলাম। ফেসবুকে এইসব বিষয়ের ইভেন্ট খুললে ৩০/৪০ হাজার মানুষ গোয়িং দেয়। উৎসাহ দেখায় কিন্তু মাঠে ১০/১২ জনকেও পাওয়া যায় না। সবাই কিবোর্ড যোদ্ধা। এইজন্য মিথ্যার এই জগৎকে যতটা সম্ভব দূরে রাখাই উত্তম। নইলে ভুয়া সেক্স স্ক্যান্ডালের মতো আপনার জীবনকেও এই মিথ্যা জগৎ মন্টির মতো ল্যাংটা করে ছেড়ে দিবে। 


রেটিংঃ ৭/১০

Post a Comment

Previous Post Next Post